সদ্য মুক্তিযুদ্ধ শেষ হওয়া একটি দেশ। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের প্রয়োজন। তখন এগিয়ে আসে জেনেভাভিত্তিক খ্রিস্টীয় ধর্মীয় সংগঠন ওয়ার্ল্ড কাউন্সিল অব চার্চেস। ত্রাণ ও পুনর্বাসনের লক্ষ্যে তারা প্রতিষ্ঠা করে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা খ্রিস্টিয়ান কমিশন ফর ডেভেলপমেন্ট ইন বাংলাদেশ (সিসিডিবি)। ১৯৭৩ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি ৫০ বছরে পা রাখল।
সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে শনিবার (২১ অক্টোবর) সাভারের বারইপাড়ায় সিসিডিবি হোপ সেন্টারে আয়োজন করা হয় এক আনন্দঘন অনুষ্ঠানের।
এতে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ থিওলজিক্যাল সেমিনার অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড. জন সরকার। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিসিডিবি কমিশনের চেয়ারম্যান ডেভিড এ হালদার এবং সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়েট কেয়া মালাকার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের নেতারা।
সিসিডিবির উন্নয়নমূলক কার্যক্রমের মধ্যে আছে সাক্ষরতা ও কর্মোপযোগী শিক্ষাদান, জীবিকা নির্বাহের উপযোগী দক্ষতার প্রশিক্ষণ, স্বাস্থ্যসেবা, খাদ্যনিরাপত্তা ও পুষ্টি, উপার্জনমূলক কর্মকাণ্ডে বৈষয়িক সহায়তা দান, সংখ্যালঘু জাতিসত্তার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি, লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণের জন্য প্রচার এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি ও দুর্যোগগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান।
সিসিডিবির সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও মোমবাতি প্রজ্বালনের মাধ্যমে। পরে পবিত্র কুরআন, গীতা, ত্রিপিটক ও বাইবেল থেকে পাঠ করা হয়। অতিথিদের আসন গ্রহণের পর পরিবেশিত হয় ৫০ বছরের অগ্রযাত্রায় নির্মিত বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র ও গান।
স্বাগত বক্তব্যে সিসিডিবির নির্বাহী পরিচালক জুলিয়েট কেয়া মালাকার বলেন, ‘১৯৭৩ সালের মার্চ মাসে সিসিডিবির যাত্রা। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার উন্নয়নে আমাদের প্রতিষ্ঠার ৫০ বছর পেরিয়ে গেল। এই দীর্ঘ সময়ে সুবিধাবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে দেশজুড়ে কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের মহান স্বাধীনতাযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের পুনর্বাসনের লক্ষ্য নিয়ে যে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করেছিল, সেই প্রতিষ্ঠানটি ধীরে ধীরে পাঁচ দশক অতিক্রম করল। এ সময়ে আমরা দেশের অসংখ্য মানুষ ও কমিউনিটির উন্নয়নে কাজ করেছি। সবার সহযোগিতায় ভবিষ্যতেও আমাদের এই উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ’
সিসিডিবি কমিশনের চেয়ারম্যান ডেভিড এ হালদার বলেন, ‘মানুষের জন্য গড়ে ওঠা প্রতিষ্ঠানটি ৫০ বছরে পা রাখল। ৫০ বছর দীর্ঘ সময়। এতগুলো বছর ধরে নিরলসভাবে কাজ করে যাওয়া সহজ নয়। স্বাধীনতা-পরর্বতী সময়ে যেমন হাজার হাজার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিল সিসিডিবি, তেমনি এখনও মানুষের পাশেই আছি আমরা। সিসিডিবি তার কাজের মাধ্যমে এমন আরও অনেক বছর টিকে থাকবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ থিওলজিক্যাল সেমিনারি অ্যান্ড কলেজের প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি ড. জন সরকার বলেন, ‘মানুষের জন্য কাজ করতে হবে। ধর্মগ্রন্থেও বলা আছে সে কথা। সিসিডিবি বিগত ৫০ বছর ধরে কাজ করছে মানুষের জন্য। তাদের ধন্যবাদ জানাই। প্রতিষ্ঠানটি কাজের মাধ্যমে আরও অনেকদূর এগিয়ে যাবে, আরও অজস্র মানুষের পাশে দাঁড়াবে, এই কামনা করি।’
সিসিডিবি বর্তমানে দেশের ২৩টি জেলায় বিভিন্ন ধরনের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে; যার উপকারভোগী প্রায় দেড় লাখ পরিবার। জেলাগুলোর মধ্যে রয়েছে মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, নরসিংদী, নবাবগঞ্জ, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, গোপালগঞ্জ, বরিশাল, খুলনা, দিনাজপুর, রংপুর, বান্দরবান, রাঙামাটি, ফরিদপুর, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, কুষ্টিয়া, নড়াইল এবং কক্সবাজার।
সিসিডিবির উন্নয়ন কার্যক্রমে প্রাধান্য পাচ্ছে সংখ্যালঘু জাতিসত্তার ক্ষমতায়ন, স্থিতিশীল ও অংশীদারত্বভিত্তিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীদের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য তাদের ছোট ছোট উদ্যোগকে সমর্থন দান, সব পর্যায়ে লিঙ্গবৈষম্য দূরীকরণ, সাংগঠনিক দক্ষতার জন্য সুযোগ সৃষ্টি এবং দুর্যোগগ্রস্তদের সহায়তা প্রদান। সিসিডিবির পথচলার ৫০ বছরকে স্মরণীয় করে রাখতে দেশজুড়ে মাসব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। অনুষ্ঠানটি সেই কার্যক্রমের উদ্বোধন। আগামী এক মাসে সিসিডিবির ১১টি কর্ম এলাকায় ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে। এ ছাড়াও ২০২৪ সালের মার্চ মাসে আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সিসিডিবির সুবর্ণজয়ন্তী পালন হবে বলে জানানো হয়েছে।